বিএমডব্লিউ, প্যাটেক ফিলিপ, রিশার্ড মিল ব্র্যান্ডের ঘড়ির দাম কোটি টাকার ওপরে। কিন্তু সেসব ঘড়ি মাত্র দুই হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল ! বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের ঘড়িটি একজনের কাছে বন্দক রেখে মাত্র ১৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছিল। যে লোক বিক্রি করেছিল, সে জানতোই না যে এই ঘড়ির এত দাম! তার জানা হয়তো সম্ভবও ছিল না এটাই স্বাভাবিক। সে সম্প্রতি গুলশানের বারিধারা পার্ক রোডের এক বাসা থেকে চুরি করেছিল এগুলো। ২৪ জুন বুধবার মিজান (২০) নামে সেই চোরকে গুলশান থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতার করা হয়েছে তাজুল ইসলাম লিটন (২৮) ও উজ্জল মিয়া (২৬) নামে আরও দুই জনকে। তারা কিনেছিল এসব চোরাই ঘড়ি। চুরি হওয়া পাঁচটি ঘড়ির মধ্যে দুটি ছিল স্বর্ণের। স্বর্ণ গলিয়ে ফেলায় তা উদ্ধার করা যায়নি কিন্তু উদ্ধার করা হয়েছে স্বর্ণের ঘড়ি বিক্রি করা এক লাখ তিন হাজার টাকা। এসব তথ্য জানিয়েছেন গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুম বিল্লাহ রনি।

গুলশান থানা পুলিশ জানায়, গত ৮ জুন রাতে গুলশানের বারিধারার পার্ক রোডের ৩২ নম্বর বাসার দোতালায় চুরি হয়। ওই বাসায় একাই থাকতেন ব্যবসায়ী মামুন আহমেদ। তার শখ ছিল দামি দামি ঘড়ি সংগ্রহের। সকালে উঠে দেখেন পাশের রুম থেকে একটি আইফোন, পাঁচটি ঘড়ি চুরি হয়ে গেছে। প্রায় কোটি টাকা করে প্রতিটি ঘড়ির মূল্য। অজ্ঞাত চোর এগুলো জানালার গ্রিল কেটে চুরি করে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় প্রথমে তিনি গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে গত ২৩ জুন একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এখন পর্যন্ত চুরি হওয়া পাঁচটি ঘড়ির মধ্যে তিনটি ঘড়ি ও আইফোনটি উদ্ধার করেতে পেরেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই মাসুম বিল্লাহ রনি জানান, চুরির ঘটনার পরপরই তারা সংগ্রহ করেন ওই বাসার চারদিকের সিসিটিভি ফুটেজ। একটি ক্যামেরার ফুটেজে রাতে ওই বাসার পাশে এক তরুণকে হাটাহাঁটি করতে দেখা যায়। সেই তরুণের ছবিটি সংগ্রহ করে তারা তাকে খুঁজতে থাকেন। আশেপাশের থানার সোর্সদের সেই তরুণের ছবি দেখিয়ে তাকে শনাক্ত করার চেষ্টা করা হয়। পরে এক সোর্সের মাধ্যমে মিজান নামে ওই তরুণকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পরে উত্তরখান এরাক মাজার রোড এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে । প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চুরির কথা স্বীকার করে সে।

পুলিশ কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই মাসুম বিল্লাহ জানান, জিজ্ঞাসাবাদে মিজান জানায়, সে বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের ঘড়িটি উজ্জল নামে এক মোবাইল মেকারের কাছে দুই হাজার টাকায় ও আইফোনটি এক হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছে। পরে মিজানকে সঙ্গে নিয়ে ভাটারা এলাকার ফাঁসেরটেক বালুরমাঠ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় উজ্জলকে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ঘড়ি ও আইফোনটি। বাকি ঘড়িগুলোর কথা জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় একই এলাকার এক স্বর্ণকারের কাছে বিক্রি করেছে। পরে তাকে নিয়ে লিটন নামে ওই স্বর্ণকারের দোকানে অভিযান চালানো হয়। লিটন স্বর্ণের ঘড়ি দুটি কেনার কথা স্বীকার করে এবং সে জানায়, কেনার পরেই সেগুলো গলিয়ে সে গলিত স্বর্ণ বিক্রি করে ফেলেছে। পরে তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় স্বর্ণের ঘড়ি বিক্রির এক লাখ তিন হাজার টাকা।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, মিজানকে বাকি দুটি ঘড়ির কথা জিজ্ঞাসা করলে সেগুলোও তার কাছে রয়েছে বলে জানায় সে। এগুলো একজনের কাছে দুই হাজার টাকা করে বিক্রি করেছিল সে। কিন্তু তখনও ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করেনি ঘড়িগুলো। পরে পুলিশ প্যাটেক ফিলিপ ও রিশার্ড মিল ব্র্যান্ডের সেই দুটি ঘড়িও উদ্ধার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রিল কাটা চোর মিজান জানায়, ঘড়িগুলো এত দামের তা সে জানতোই না। শুধু স্বর্ণের ঘড়ি দুটি গলিয়ে বেশি দামে বিক্রি করা যেত বলে ধারণা ছিলো তার।
পুলিশ কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ রনি বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে বোঝা যায় যে মিজান একজন পেশাদার গ্রিল কাটা চোর। গ্রিল কাটার একটি যন্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে তার কাছ থেকে। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার সঙ্গে আরও কেউ চুরি করেছে কিনা এবং আগে সে কোন কোন বাসায় চুরি করেছিল সেগুলোও জানার চেষ্টা চলছে।
0 Comments