কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত এক রোগী অক্সিজেন ব্যবহারে অ’তিরিক্ত বিল রাখার অ’ভিযোগ তুলেছেন ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লের বি’রুদ্ধে । ১৬ দিন ওই হাসপাতা’লে থেকে সুস্থ হয়ে ফেরার সময় তাকে মোট ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করতে হয়েছে মোজাম্মেল হক নামে ওই রোগীকে। এর মধ্যে ৮৬ হাজার টাকা বিল দিতে হয়েছে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য।

মোজাম্মেল হক সাবেক সরকারি কর্মক’র্তা, তিনি জানিয়েছেন, তিনি মোট তিন দিন অক্সিজেন নিয়েছিলেন, ১০ মিনিট করে ৩০ মিনিট। তার ছেলে ফয়সাল হক বলেন, অ’সুস্থ হওয়ার পঞ্চম দিন তার বাবার সামান্য শ্বা’সক’ষ্ট দেখা দিলে তিনি কর্তব্যরত চিকিৎসককে তা জানিয়েছিলেন। তখন চিকিৎসক তাকে দিনে ১০ মিনিট করে অক্সিজেন নেওয়ার কথা বলেন।
কিন্তু ডিসচার্জের দিন দেখি, ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা বিল করেছে অক্সিজেন বাবদ। আমরা জানতে চাইলাম এত টাকা কীভাবে এল? তখন তারা আমাকে জানাল, অক্সিজেন বিল ঘণ্টায় ৪০০ টাকা। আমি হিসাব করে দেখলাম, বাবাকে তাতে ২১৬ ঘণ্টা অক্সিজেন দিতে হয়েছে। একটা মানুষকে ৯ দিন একটানা অক্সিজেন দিয়ে রেখেছে! এটা কি করে সম্ভব? এটা মন গড়া বিল।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মক’র্তা মোজাম্মেল চট্টগ্রামে থাকেন। কোভিড-১৯ (করনা ভাইরাস) এর লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দিলে তিনি ২৭ মে চট্টগ্রামে নমুনা পরীক্ষা করান। ২৮ মে তার ফলাফল ‘পজিটিভ’ আসে।
ফয়সাল বলেন, তার বাবা চট্টগ্রামের বাসায় একা থাকেন বলে চিকিৎসার সুবিধার জন্য তাকে ঢাকায় এনেছিলাম। ৩০ মে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতা’লে ভর্তি করেন। পরে ১৪ জুন পর্যন্ত ওই হাসপাতা’লে চিকিৎসা নেন তিনি। ফয়সাল বলেন, চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকবেন এই চিন্তা করেই হাসপাতা’লে ভর্তি করেছিলাম। আব্বার এমনিতে খুব বেশি সমস্যা ছিল না।
মোজাম্মেল হক বলেন, তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ভালো ছিল। মাঝে একদিন তা ৯২-৯৩ থাকায় চিকিৎসককে গিয়ে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। ডাক্তার বলল, বেশি খা’রাপ লাগলে ১০ মিনিট অক্সিজেন নিবেন। আমি বয়স্ক মানুষ, হলফ করে বলতে পারি, তিন দিনে ১০ মিনিট করে অক্সিজেন নিয়েছি। এই দুর্দিনে সবাই মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। কিন্তু তারা সবার গলা কাটছে।
ফয়সাল অভিযোগ করেন, কেবিন হিসেবে যে রুম দেওয়া হয়েছে, তাও অনেক ছোট। হাসপাতালে থাকাকালীন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাইরে থেকে কিনে দিতে হয়েছে। মোজাম্মেল হক আরো জানান, যত দিন তিনি ছিলেন কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাকে দেখতে যায়নি।
যতদিন ছিলাম ডাক্তার চোখেও দেখিনি, নার্সরা মাঝেমধ্যে গিয়েছে কিন্তু তারা ডিউটি ডাক্তার আর কনসালটেন্ট ফি ধরেছে ৪৯ হাজার টাকা।
মোজাম্মেল হকের বিলের কাগজ দেখা গেছে, বেড ও কেবিনের ভাড়া ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা, হাসপাতা’লের সার্ভিস ৪৫ হাজার ৪০০ টাকা, নার্সিং ফ্যাসিলিটিজ ১১ হাজার ২০০ টাকা, অক্সিজেন বিল ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা, ডাক্তার ও কনসালটেন্ট ফি ৪৯ হাজার টাকা।
এছাড়া অন্যান্য খরচ ও সার্ভিস চার্জ মিলিয়ে মোট বিল দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫৯ টাকা। মোজাম্মেল হকের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। বাকি টাকা ডিসকাউন্ট হিসেবে দেখানো হয়েছে।
অ’ভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতা’লের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না। এখানে আমাদের একটা মিডিয়া সেল করা হচ্ছে, তার সঙ্গে আপনি কথা বলেন। কথা কার সঙ্গে বলতে হবে একটু পর আপনাকে জানিয়ে দিব।
মিডিয়া সেলের কার সঙ্গে কথা বলতে হবে, তা আর জানাননি ডা. এহতেশামুল হক। এরপর মোবাইলে কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি তার।
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। তিনি লক্ষ্মীপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। গত ২ জুন আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতা’লের বি’রুদ্ধে অ’তিরিক্ত বিল নেওয়ার অ’ভি’যোগ করেন আরেক রোগী।
পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি ওই রোগীর কাছ থেকে নেওয়া অ’তিরিক্ত টাকা ফেরত দেয়। ওই সময় আরও কয়েকজন রোগীর কাছ থেকেও অ’তিরিক্ত টাকা নেওয়ার অ’ভি’যোগ ছিল আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতা’লের বি’রুদ্ধে।
0 Comments